সারোয়ার হোসেন,তানোর: শ্রাবণের শেষের দিকে দেখা দিয়েছে কাংখিত বৃষ্টি। যার কারনে রাজশাহীর তানোরে কৃষক মনে বিরাজ করছে স্বস্তির নি:শ্বাস। গত রবিবার দিবাগত রাত ভর টানা বৃষ্টি হয়। যা এখনো চলমান রয়েছে। রবিবার রাত ও সোমবার সকালে ও মঙ্গলবার থেমে এবং বুধবার বিকেল থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। তার আগে ছিটেফোটা বৃষ্টি হয়েছিল। বৃষ্টি না হওয়ার কারনে রোমা আমনের ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে পড়েছিল। টানা বর্ষন হওয়ার কারনে কৃষকরাও জমিতে প্রয়োজনীয় সার ও কীটনাশকসহ আগাছা দমনে কোমর বেঁধে জমিতে নেমে পড়েছেন। এতে করে কৃষক দের মাঝে ব্যাপক স্বস্তি বিরাজ করছে।
কৃষক গোলাম মোস্তফা জানান, ৩৫ কাঠা জমিতে রোপা আমন রোপন করার কয়েকদিন পর পানি ছিলনা। সেচ দেওয়ার টাকাও নাই। মনে হয়েছিল ধান আর ঘরে তুলতে পারব না। কিন্তু রহমতের বৃষ্টি পাওয়ার পর সার দিয়ে ধানগাছের রুপ বদলে গেছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কৃষকরা ধানী জমির মাঠে কাজ করছেন। কেউ ইউরিয়া পটাশ সার দিচ্ছেন, আবার কেউ আগাছা পরিস্কার করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
পাঁচন্দর ইউপির দুবইল গ্রামের আদর্শ কৃষক জাইদুর রহমান বলেন, ধানের জমি ও পাতার যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল তাতে করে আর ১০/১২ দিন পানি না পেলে রোদের তাপে পুড়ে যেত। কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে রবিবার দিবাগত রাতভর ভারি টানা বৃষ্টি হয়। তারপর থেকেই দিনে রাতে বৃষ্টি হতেই আছে। এবার ২৫ বিঘা জমিতে রোপা আমন রোপন করেছি। রোপনের এক সপ্তাহ পর জমিতে পানি ছিল না। ফেটে চৌচির হয়ে পড়েছিল। বৃষ্টির পানি পাওয়ার পর ধানগাছ তার যোবন ফিরে পেয়েছে। বৃষ্টির পানি না পাওয়ার কারনে সার কীটনাশক দেয়া যাচ্ছিল না। বৃষ্টির পানি পেয়ে সবাই একযোগে সার কীটনাশক দেয়া শুরু করেছেন। এমনকি রোপনের সময় পর্যাপ্ত পানি না থাকার কারনে ডিএপি সার ছাড়াই রোপন করেছেন শতশত কৃষকরা। পানি পাওয়ার পর ডিএপি,পটাশ ও ইউরিয়া সার একসাথে প্রয়োগ করছেন। এছাড়াও বিলুপ্ত হওয়া ১১০ প্রজাতির ধান রোপন করেছেন ১৫ কাঠা জমিতে। একই মাঠে জালালের ৫০ বিঘা, সওদাগরের ১৮ বিঘা, মোস্তফা ওরফে ডামপুর ৩০ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষাবাদ করে পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
নোনা পুকুর মাঠে জাবেদ আলী ১১ বিঘা জমিতে রোপা আমন রোপন করে বৃষ্টির পানি না পাওয়ার কারনে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। বৃষ্টির পানি পেয়ে জাবেদ পুরো দমে ধানগাছের পরিচর্যা শুরু করেছেন।
জাইদুর আরো জানান, সময়মতই বৃষ্টি হয়েছে। আর ৮/১০ দিন পর বৃষ্টি হলে ধানগাছের পাতা মরে যেত।
চান্দুড়িয়া ইউপির কৃষক মুসলেম জানান, গাগরন্দ মাঠে ৩৬ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করা হয়েছে। এবারে সুমন স্বর্না ও একান্ন জাতের ধান রোপন করা হয়েছিল। একই মাঠে রহিদুলের ১২ বিঘা, আইয়ুবের ৪০ বিঘা, নুরনবীর ১৫ বিঘা, রবিউলের ১২ বিঘা, জমি রোপন করা হয়েছে। তারা জানান বৃষ্টি না হলে পথে বসতে হত। কারন বিগত সময়ের চেয়ে দ্বিগুন খরচে জমি রোপন করা হয়েছিল। রহমতের বৃষ্টি পেয়ে সবাই জমিতে স্বস্তি সহকারে কাজ করছে।
কৃষক মুসলেম জানান, চান্দুড়িয়া ইউপির বিসিআইসির ডিলার ফটিক সার দেয়না। বেশি ভাড়া দিয়ে অন্য জায়গা থেকে সার সংগ্রহ করতে হচ্ছে। অবশ্য ফটিক আ”লীগ নেতা হাওয়ার কারনে সঠিক ভাবে সার না এনে বাড়তি দামে মোকামেই বিক্রি করেন এমন অভিযোগ অহরহ।
বাধাইড় ইউপির কৃষক দুরুল হুদা জানান, পানির অভাবে এই ইউপির অনেক কৃষক জমি রোপন করতে পারেনি। রবিবারের রাতে ও সোমবার, মঙ্গলবারের বৃষ্টিতে নতুন ভাবে জমি চাষ করে রোপন শুরু হয়েছে। এই এলাকা জমিগুলো উঁচু। এজন্য পানি বেশি সময় জমিতে থাকেনা। শ্রাবন মাসের শেষের দিক জমি রোপন করতেই হবে। অনেকে বিভিন্ন ভাবে সেচ নিচ্ছেন জমি রোপনের জন্য। আর একবার টানা ভারি বর্ষন হলে প্রায় জমি রোপন হয়ে যাবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ জানান, এবারে রোপা আমনের লক্ষমাত্রা ২২ হাজার ৪২০ হেক্টর জমি। এখনো ১ হাজার হেক্টর জমি রোপন হয়নি। গত রবিবার থেকে বৃষ্টি কৃষকের আশির্বাদ। বৃষ্টি হওয়ার কারনে বাধাইড়, মুন্ডুমালা এলাকার অনেক জমি রোপন হয়েছে। তবে বৃষ্টি লেগেই আছে একারনে বাকি ১ হাজার হেক্টর জমি রোপন হয়ে যাবে। লক্ষমাত্রার চেয়ে কয়েকগুণ ফলন বেশি হয়। আশা করছি গত বোরো মৌসুমে যে ফলন হয়েছে, রোপা আমনের ফলনও হবে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।
Leave a Reply